ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় আরও কিছু বন্দির মৃতদেহ বিনিময় করেছে। তবে হামাস অভিযোগ করেছে যে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করছে এবং এখনো রাফাহ সীমান্ত খুলে দিচ্ছে না।
মঙ্গলবার রাতে হামাস দুই ইসরায়েলি বন্দির দেহ হস্তান্তর করে — ৮৫ বছর বয়সী আরিয়েহ জালমানোভিচ এবং সেনা সদস্য টামির আদার (৩৮)। আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের তত্ত্বাবধানে এই হস্তান্তর সম্পন্ন হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, জালমানোভিচ গাজায় বন্দিদশায় মারা যান এবং আদার নিহত হন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার সময়।
এ পর্যন্ত হামাস মোট ১৫ জন ইসরায়েলি বন্দির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে এবং আরও অন্তত ১৩ জনের দেহ ফেরানোর প্রস্তুতি চলছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং ৩৬০ জন মৃত বন্দির দেহ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার গাজায় ইসরায়েলি কারাগারে নিহত ১৫ ফিলিস্তিনির দেহ ফেরত আসে। চিকিৎসকদের দাবি, অনেক দেহে নির্যাতন ও সম্ভাব্য হত্যার চিহ্ন পাওয়া গেছে।
হামাসের এক প্রতিনিধি দলের সদস্য মুজাহিদ মুহাম্মদ দারউইশ কাতারে তুর্কি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, “ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে বিলম্ব করছে, বিশেষ করে রাফাহ সীমান্ত খুলে না দিয়ে মানবিক সহায়তা বন্ধ রাখছে।”
রাফাহ সীমান্ত, যা গাজা ও মিশরের সংযোগস্থল, ২০২৪ সালের মে মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর দখলের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। জাতিসংঘ রাফাহকে গাজার “দুইটি মানবিক জীবনরেখার একটি” বলে আখ্যা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) রাফাহ খোলার নির্দেশ দিলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় অভিযান চালাতে প্রস্তুত আছে। তবে তিনি বলেছেন, “এখনই নয়”, কারণ যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, “যদি হামাস চুক্তি ভঙ্গ করে, তবে তাদের পরিণতি হবে দ্রুত, নির্মম ও ভয়াবহ।”
বর্তমানে গাজার পরিস্থিতি নাজুক। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশ প্রায় স্থবির। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী প্রতিদিন ৬০০টি ত্রাণ ট্রাক প্রবেশের কথা থাকলেও, এখন পর্যন্ত মাত্র ৯৮৬টি ট্রাক ঢুকেছে।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইসরায়েল সফরে বলেছেন, “আমরা ভালো অবস্থানে আছি, তবে প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। অনেক মৃতদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে।”
এদিকে, পশ্চিম তীরে জলপাই সংগ্রহ মৌসুম শুরু হতেই অবৈধ ইসরায়েলি দখলদারদের হামলা বেড়েছে। রোববার তুরমুস আয়্যা শহরে বসতকারীরা ফিলিস্তিনি কৃষকদের ওপর লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। এক নারী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে পশ্চিম তীরে বসতকারীদের হামলা বেড়েছে ১৩ শতাংশ। শুধুমাত্র জলপাই মৌসুমের প্রথম সপ্তাহেই ১৫০টিরও বেশি হামলা হয়েছে, এবং ৭০০-র বেশি জলপাই গাছ নষ্ট করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির মাঝেও পশ্চিম তীরের সহিংসতা এবং রাফাহ সীমান্ত বন্ধ থাকা—উভয়ই পুরো অঞ্চলের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
সূত্র: আল জাজিরা, এপি, জাতিসংঘ মানবাধিকার দফতর



