যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নতুন শান্তি পরিকল্পনা ঘিরে ইউক্রেন, ইউরোপ ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় শুক্রবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দেশটি তার ইতিহাসের অন্যতম কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি।
জেলেনস্কি বলেন, “ইউক্রেনের ওপর চাপ এখন সবচেয়ে কঠিনগুলোর একটি। আমাদের সামনে হয় মর্যাদা হারানোর ঝুঁকি, নয়তো প্রধান মিত্রকে হারানোর আশঙ্কা।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি একটি ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে, যা ফাঁস হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এতে ইউক্রেনকে নিম্নোক্ত শর্ত মানতে বলা হয়েছে—
রাশিয়ার দখলে থাকা কিছু এলাকা ছেড়ে দেওয়া
রুশ ভাষাকে সরকারিভাষা হিসেবে গ্রহণ
সেনাবাহিনীর আকার অর্ধেকে নামিয়ে আনা
ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ না দেওয়ার অঙ্গীকার।
পরিকল্পনাটি ইউক্রেন ও ইউরোপের বিস্তৃত অংশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। বেসরকারি জরিপে দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ ইউক্রেনীয় এই পরিকল্পনাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় জি২০ সম্মেলনের ফাঁকে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ১৪ দেশের নেতারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, মার্কিন প্রস্তাব “ভিত্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হলেও এটি আরও কাজের প্রয়োজন”।
তাদের উদ্বেগের মূল বিষয়—
সীমান্ত বলপ্রয়োগে পরিবর্তন করা যাবে না
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর উপর কঠোর সীমাবদ্ধতা দেশটিকে ভবিষ্যতের আক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে
ন্যাটো বা ইইউ-তে যোগ দেওয়া সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মতির ওপর নির্ভরশীল।
রবিবার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সেখানে যোগ দেবেন। ইউক্রেন তাদের পক্ষে প্রেসিডেন্ট অফিস প্রধান আন্দ্রি ইউরমাকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন পরিকল্পনার “বিকল্প” প্রস্তাব দেবেন এবং ইউক্রেনের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রতিনিধিরা দৃঢ় অবস্থান নেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান শিবিরের ভেতরেও ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে।
সেনেটর মিচ ম্যাককনেল বলেন, “রাশিয়ার বর্বরতাকে পুরস্কৃত করা আমেরিকার স্বার্থের জন্য বিপজ্জনক।”
কংগ্রেসম্যান ডন বেকন মন্তব্য করেন, “এটি এক ভয়াবহ চুক্তি… ইউক্রেনকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার মতো।”
ট্রাম্পের নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থানও সমালোচনার মুখে রয়েছে, যা শান্তি পরিকল্পনার ভবিষ্যতকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এই পরিকল্পনা “চূড়ান্ত চুক্তির ভিত্তি হতে পারে”, তবে ইউক্রেন আলোচনায় না এলে তিনি আরও ভূখণ্ড দখলের হুমকি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ২৭ নভেম্বরের মধ্যে ইউক্রেনকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়সীমা দিয়েছে। ইউক্রেন যদি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ওয়াশিংটনের সমর্থন কতটা কমবে এবং ইউরোপ একা কতটা সহায়তা দিতে পারবে—এটাই এখন প্রধান প্রশ্ন।
অনিশ্চয়তায় ঘেরা এই প্রস্তাব ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের দৃষ্টি এখন জেনেভার বৈঠকের দিকে, যেখানে হয়তো যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।



