রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই দুই দেশে নতুন করে প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাতভর হামলায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন—এর মধ্যে ইউক্রেনে ছয়জন এবং রাশিয়ায় তিনজন।
ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগ জানিয়েছে, সোমবার ভোরে রাশিয়ার ভারী বোমাবর্ষণে রাজধানী কিয়েভে ছয়জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে অগ্নিকাণ্ড ও ধ্বংসস্তূপের সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়া জানিয়েছে যে ইউক্রেনীয় হামলায় রোস্তভ অঞ্চলে তিনজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে তারা রাতভর ইউক্রেনীয় প্রায় ২৫০টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সচিব ড্যান ড্রিসকল আবুধাবিতে রুশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে খবর পাওয়া গেছে। একই স্থানে তিনি ইউক্রেনের গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ–এর সঙ্গেও দেখা করতে পারেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, যে কোনো সংশোধিত শান্তি প্রস্তাব অবশ্যই আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকে হওয়া “বোঝাপড়ার চেতনা ও ভাষা” প্রতিফলিত করতে হবে।
লাভরভ জানান, ২৮ দফার যে প্রাথমিক মার্কিন শান্তি প্রস্তাব ছিল—যা অনেকেই রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকে আছে বলে মনে করেন—মস্কো সেটিকে স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু নতুন সংশোধিত খসড়া তাদের হাতে এখনও পৌঁছায়নি।
ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান রুস্তেম উমেরভ জানিয়েছেন, নভেম্বরের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতা চূড়ান্ত করতে পারেন।
তিনি বলেন, জেনেভায় মার্কিন ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের বৈঠকে “মূল শর্তগুলোতে সাধারণ সমঝোতা” তৈরি হয়েছে এবং এখন ইউরোপীয় সহযোগীদের সমর্থনের অপেক্ষা।
রুশ বিশ্লেষক আন্দ্রে কোরতুনভ মনে করেন, আবুধাবির আলোচনায় রাশিয়া প্রাথমিক ২৮ দফার পরিকল্পনায় ফিরতে চাপ দেবে। তার মতে, পরিবর্তিত খসড়ায় সমঝোতা করতে গেলে ক্রেমলিনকে “অতিরিক্ত নমনীয়তা” দেখাতে হবে, যা তারা এখনো করতে প্রস্তুত নয়।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে “কৌশলগত উদ্যোগ” বর্তমানে রাশিয়ার হাতে, তাই তারা ছাড় দিতে আগ্রহী নয়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে তাদের বাহিনী ডনেস্কের ইভানোপিলিয়া গ্রাম দখলে নিয়েছে। একই সঙ্গে তারা ইউক্রেনের সামরিক ও জ্বালানি স্থাপনায় রাতভর “ম্যাসিভ” হামলা চালিয়েছে।
ইউক্রেন পাল্টা জানায়, তারা রাশিয়ার ক্রাসনোদার অঞ্চলের একটি তেল শোধনাগার এবং নভোরোসিস্ক বন্দরের একটি তেল টার্মিনালে হামলা চালিয়েছে।
মোলডোভার ফ্লোরেসতি জেলায় ড্রোনের টুকরো বাড়ির ওপর পড়লে স্থানীয় লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। রোমানিয়াও আজ ড্রোন অনুপ্রবেশের খবর দিয়েছে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই দেশেই এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে।
স্থলযুদ্ধ, দুর্নীতি কেলেঙ্কারি এবং জোরপূর্বক সেনা সমাবেশের কারণে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে। রাস্তা থেকে যুবক ও মধ্যবয়সী মানুষকে ধরে নিয়োগ কেন্দ্রে পাঠানোর ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করেছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা—যে শান্তি চুক্তির কথা চলছে, তা তাদের মতামত ছাড়াই বিদেশে তৈরি হচ্ছে।
রাশিয়া ইউক্রেন–ইউরোপের যৌথ পাল্টা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে, এটিকে “অগঠনমূলক” বলা হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ট্রাম্পের প্রস্তাবে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, কোনো চুক্তি যেন “ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ” না হয়ে যায়।



