রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একটি ‘পরিমার্জিত শান্তি কাঠামো’ প্রণয়ন করেছে। রবিবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর উভয় দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, আগের প্রস্তাবকে সংশোধন করে নতুন এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। তবে এর বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
হোয়াইট হাউস জানায়, ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল নিশ্চিত করেছে যে নতুন পরিকল্পনাটি তাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কিয়েভের কৌশলগত চাহিদাগুলোকে বিবেচনায় নেয়। যদিও ইউক্রেন নিজ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
পরিমার্জিত পরিকল্পনায় কীভাবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে—যুদ্ধ চলাকালে যেটি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—তা এখনও স্পষ্ট নয়। দুই দেশই বৃহস্পতিবারের সময়সীমাকে সামনে রেখে ‘তীব্র কাজ’ চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, সময়সীমা কিছুটা নমনীয় হতে পারে।
এই সপ্তাহেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পরিকল্পনার সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফরে যেতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থাপিত প্রথম ২৮ দফা প্রস্তাবে ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছাড় দিতে, সামরিক সক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে এবং ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। ইউক্রেনের জন্য যেগুলো কার্যত আত্মসমর্পণের শামিল। প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও বিস্ময় তৈরি করে—কারণ এটি নাকি মায়ামিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের অংশগ্রহণে তৈরি হয়, যেখানে রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত এক দূতও ছিলেন।
এদিকে ইউরোপীয় মিত্ররা জানায়, প্রাথমিক পরিকল্পনায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। তারা একটি পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে ইউক্রেনের আঞ্চলিক ছাড়ের কিছু শর্ত শিথিল করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ন্যাটো-ধাঁচের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে এ সময় রাশিয়া ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করছে। একই সঙ্গে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; লক্ষ লক্ষ মানুষ দৈনিক বহু ঘণ্টা পানি, গরম ও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
দেশের ভেতরেও জেলেনস্কি চাপে আছেন। দুর্নীতিবিরোধী তদন্তে কয়েকজন মন্ত্রী জড়িত হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ বেড়েছে, যা অর্থনৈতিক সহায়তা সংগ্রহের প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়ার তেল খাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও ইউক্রেনের দীর্ঘ-পাল্লার ড্রোন হামলায় রাশিয়ার জ্বালানি শিল্পে ক্ষতি হওয়ায় কিয়েভ কিছুটা আশাবাদী হয়েছে।



