ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ) সতর্ক করে বলেছে, গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের লক্ষ্য করে কিছু রহস্যজনক কোম্পানি ও ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক মানব পাচার ও জোরপূর্বক উচ্ছেদের কাজে লিপ্ত হয়েছে, যা তারা বলছে ইসরায়েলের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
এই সতর্কতা আসে শুক্রবার ১৫৩ জন ফিলিস্তিনি অজ্ঞাত গন্তব্যে গাজা থেকে বেরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছানোর পর। তারা কেনিয়া হয়ে একটি ফ্লাইটে জোহানেসবার্গে নামে, কিন্তু যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় ১২ ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটক ছিল। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের ৯০ দিনের ভিসা প্রদান করে।
পিএর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে। একই সঙ্গে সতর্ক করে বলেছে, “বিভিন্ন কোম্পানি ও মধ্যস্থতাকারীরা ফিলিস্তিনিদের বিভ্রান্ত করছে এবং তাদের উচ্ছেদে প্ররোচিত করছে।”
আল জাজিরা জানিয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানটি ফ্লাইটটি পরিচালনা করেছে বলে দাবি করা হয়েছে—”আল-মাজদ ইউরোপ”—তাদের ঘোষিত ঠিকানা পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায় হলেও সেখানে কোনো অফিস পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এই ধরনের ফ্লাইটগুলো কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে চলছে।
মাঠ প্রতিবেদকরা বলছেন, গাজায় দুই বছরের টানা বোমাবর্ষণ, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক ফিলিস্তিনি নিরাপত্তার জন্য অঞ্চলটি ছাড়ার চেষ্টা করছেন। যাদের সামান্য অর্থ আছে, তারা সন্তানদের নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ডার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি জানিয়েছে, ১৩০ জন ফিলিস্তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশ করেছে এবং ২৩ জনকে অন্য দেশে পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাগই আশ্রয়ের আবেদন করতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকার মানবিক সংস্থা ‘গিফট অব দ্য গিভারস’ এই ফিলিস্তিনিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছে। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ইমতিয়াজ সুলেইমান বলেছেন, তিনি জানেন না কে বিমানটি ভাড়া করেছে, তবে তিনি জানিয়েছেন যে অক্টোবরের শেষে আরও একটি ফ্লাইটে ১৭৬ জন ফিলিস্তিনি এসেছিল।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজার মানুষদের গোপনে বিদেশে পাঠাচ্ছে, পাসপোর্টে কোনো সিল ছাড়াই, যাতে তারা তৃতীয় কোনো দেশে আটকা পড়ে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রী অফিস এ বিষয়ে মন্তব্য করেনি। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে গাজার ফিলিস্তিনিদের বাইরে পাঠানোর প্রস্তাব নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে।
অন্যদিকে, জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শনিবার গাজা থেকে কোনো ফিলিস্তিনির জোরপূর্বক স্থানান্তরকে ‘শূন্য সহনশীলতা’ বলে ঘোষণা করেছেন।
বিশ্লেষক অ্যান্টনি লোয়েনস্টেইন বলেছেন, “এটি হল মানুষের দুর্দশাকে পুঁজি করে মুনাফা করার পরিকল্পনা। ইসরায়েলি সরকারের অনেক সদস্য চান গাজার কোনো ফিলিস্তিনি অবশিষ্ট না থাকে।”
গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার এ ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। মানবাধিকার সক্রিয়বাদী ও রাষ্ট্রসমূহ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও ক্ষুধা, যুদ্ধ এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকেই এখনও বাঁচার আশায় ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।



