নাইজেরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “খ্রিস্টান গণহত্যা” সংক্রান্ত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে, দেশটিতে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা তারা স্বাগত জানাবে—তবে নিজেদের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান বজায় রেখে।
রবিবার ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চলছে এবং তিনি “দ্রুত সামরিক পদক্ষেপ” নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছেন—এর মধ্যে সেনা মোতায়েন বা বিমান হামলার কথাও রয়েছে।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিমিয়েবি ইমোমোটিমি এবিয়েনফা আল জাজিরাকে বলেন, “নাইজেরিয়ায় কোনো খ্রিস্টান গণহত্যা চলছে—এ কথা সত্য নয়। সন্ত্রাসীরা শুধু খ্রিস্টান নয়, মুসলিম ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মাবলম্বীদেরও হত্যা করছে। এটি ধর্মীয় নয়, বরং সন্ত্রাসবাদজনিত সহিংসতা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, তবে কোনো ধরনের পদক্ষেপ আমাদের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করতে পারে না।”
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুর উপদেষ্টা ড্যানিয়েল বওয়ালা বলেন, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চায়, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান ও সহযোগিতার ভিত্তিতে। তিনি ট্রাম্পের মন্তব্যকে “অতিরঞ্জিত” বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি নাইজেরিয়াকে পুনরায় “ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী দেশগুলির তালিকা”-তে যুক্ত করেছে। এই তালিকায় চীন, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া এবং পাকিস্তানও রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট টিনুবু—যিনি নিজে মুসলিম হলেও এক খ্রিস্টান পাস্টরের স্বামী—এক বিবৃতিতে বলেন, “নাইজেরিয়া ধর্মীয় সহনশীলতার দেশ। আমাদের সরকার মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করছে এবং সব ধর্মের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “খ্রিস্টান গণহত্যা”র দাবিটি বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। নাইজেরিয়ার সংঘাত বহুস্তরীয়—এতে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ভূমি বিরোধ, জাতিগত উত্তেজনা এবং সশস্ত্র ডাকাতি সবই জড়িত।
সংঘাত বিশ্লেষণ সংস্থা ACLED–এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর নাইজেরিয়ায় বেসামরিক জনগণের ওপর ১,৯২৩টি হামলার মধ্যে ধর্মীয় কারণে খ্রিস্টানদের লক্ষ্য করে হামলার সংখ্যা মাত্র ৫০টি।
নাইজেরিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বোকো হারাম ও আইএসডব্লিউএপি (Islamic State West Africa Province) বহু বছর ধরে মুসলিম ও খ্রিস্টান উভয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ধর্মীয় বিভাজনকে কেন্দ্র করে তৈরি ভুল ধারণা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে।



