নাসার পরীক্ষামূলক সুপারসনিক জেট এক্স-৫৯ কুয়েস্ট (X-59 QueSST) সফলভাবে আকাশে উড়েছে, আর এর সঙ্গে বিমান চলাচলের ভবিষ্যতের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মোহাভি মরুভূমির আকাশে এই বিশেষ বিমানটি প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করে, যা শব্দের গতির বাধা অতিক্রম করলেও প্রচলিত “সনিক বুম” বা ভয়ংকর শব্দ সৃষ্টি করেনি।
মঙ্গলবার সকালে (২৮ অক্টোবর) সূর্যোদয়ের কিছু পর নাসার প্রধান পরীক্ষামূলক পাইলট নিলস লারসন এক্স-৫৯ বিমানটি চালান। বিমানটি প্রায় এক ঘণ্টা উড্ডয়ন শেষে নিরাপদে অবতরণ করে নাসার আর্মস্ট্রং ফ্লাইট রিসার্চ সেন্টারে।
এই বিমানের মূল লক্ষ্য হলো — শব্দের গতিতে উড্ডয়ন করলেও সেই ভয়ানক বিস্ফোরণধ্বনি (sonic boom) কমিয়ে আনা, যাতে ভবিষ্যতে স্থলভাগের ওপর দিয়েও সুপারসনিক বাণিজ্যিক বিমান উড়তে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ, কারণ শব্দের তীব্রতা মানুষের জন্য বিরক্তিকর ও বিপজ্জনক।
এক্স-৫৯–এর নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে চাপের তরঙ্গগুলো ধীরে ধীরে ভেঙে যায় এবং বড় ধাক্কাধ্বনি তৈরি না করে “হালকা থাপের মতো” শব্দ সৃষ্টি করে। এর দীর্ঘ ও সরু নাক বিমানটির চাপ তরঙ্গকে ভেঙে দেয়, আর ইঞ্জিনটি নিচের বদলে ওপরের দিকে স্থাপন করা হয়েছে যাতে শব্দ তরঙ্গ ভূমির বদলে আকাশের দিকে প্রতিফলিত হয়।
বিমানটির দৈর্ঘ্য ৯৯.৭ ফুট এবং প্রস্থ ২৯.৫ ফুট, যা প্রায় একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের দ্বিগুণ লম্বা। এটি একটি জেনারেল ইলেকট্রিক এফ-৪১৪ ইঞ্জিন দ্বারা চালিত, যা বিমানটিকে ম্যাক ১.৪ (প্রায় ৯২৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা) গতিতে উড়তে সক্ষম করবে।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, পাইলটের সামনে কোনো কাচের জানালা নেই। এর পরিবর্তে রয়েছে ৪কে মানের এক্সটারনাল ভিজিবিলিটি সিস্টেম (eXternal Visibility System), যা ক্যামেরার মাধ্যমে বাইরের দৃশ্য দেখায়। এটি বিমানের বায়ুগতিশাস্ত্র উন্নত করে এবং শব্দ কমাতে সাহায্য করে।
নাসা এখন বিভিন্ন মার্কিন শহরের আকাশে এই বিমানের উড্ডয়ন পরীক্ষার পরিকল্পনা করছে, যাতে সাধারণ মানুষ শব্দের মাত্রা কতটা সহ্য করতে পারে তা যাচাই করা যায়। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) ভবিষ্যতে শব্দ সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যা সুপারসনিক বাণিজ্যিক উড্ডয়নের পথ খুলে দিতে পারে।
যদি এক্স-৫৯ প্রকল্প সফল হয়, তবে দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রা অর্ধেক সময়ে শেষ করা সম্ভব হবে — যা নিঃশব্দ, দ্রুত ও আরামদায়ক ভ্রমণের নতুন যুগ শুরু করবে।



