দীর্ঘ দুই দশকের অপেক্ষার পর অবশেষে শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হচ্ছে মিশরের কায়রোতে বহুল প্রতীক্ষিত Grand Egyptian Museum (GEM)। আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এই জাদুঘরটিতে প্রদর্শিত হবে ৫,০০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন মিশরীয় প্রাচীনত্বের হাজার হাজার নিদর্শন —যার অনেকগুলো জনসাধারণের সামনে এবারই প্রথম উন্মুক্ত করা হচ্ছে।
গিজার পিরামিডের পটভূমিতে নির্মিত এই বিশাল জাদুঘরটির নির্মাণ ব্যয় এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। প্রায় ২০ বছরের দীর্ঘ প্রস্তুতি শেষে এটি এখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, প্রতি বছর প্রায় পাঁচ মিলিয়ন দর্শনার্থী এখানে ভ্রমণ করবেন।

মিশরের গণমাধ্যম ও কর্মকর্তারা উদ্বোধনকে বর্ণনা করেছেন “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” হিসেবে। তারা বলছেন, এটি “বিশ্বের প্রতি মিশরের উপহার” এবং “মিশরীয় সভ্যতার নতুন অধ্যায়”।
জাদুঘরের প্রদর্শনীর অন্যতম আকর্ষণ হবে ফেরাউন তুতানখামেনের স্বর্ণমুখো মুখোশ, যার নতুন প্রদর্শনী নিয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। উদ্বোধনের পর মঙ্গলবার থেকে সাধারণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে জাদুঘরটি, যেখানে প্রায় ৪,৫০০টি সমাধিসংক্রান্ত নিদর্শন প্রদর্শিত হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি উদ্বোধনী প্রস্তুতি তদারকির জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। তিনি বলেছেন, অনুষ্ঠানটি এমনভাবে আয়োজন করতে হবে যা মিশরের সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব ও ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী মোস্তাফা মাদবুলি এক পরিদর্শনে বলেন, এটি প্রমাণ করবে যে মিশর “সভ্যতার সূতিকাগার ও সংস্কৃতি উদ্ভাবনের কেন্দ্র”।
উদ্বোধনটি মূলত জুলাই মাসে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু জুনে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের কারণে তা স্থগিত হয়। এর আগে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও কোভিড-১৯ মহামারিও প্রকল্পটির অগ্রগতিতে বড় বাধা সৃষ্টি করেছিল।
বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য মিশরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড মিডিয়া সার্ভিসেস সামাজিক মাধ্যম টিকটকের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে, যাতে মিশরের ঐতিহ্য ও সভ্যতার গল্প সারা বিশ্বের দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
পর্যটন খাত মিশরের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ, যা দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ১০ শতাংশ জোগান দেয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মিশরের পর্যটন আয় দাঁড়ায় ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৪.৬ শতাংশ বেশি। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসেই দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন।

এই গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের উদ্বোধনকে মিশর কর্তৃপক্ষ তাদের পর্যটন ও সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের এক নতুন সূচনা হিসেবে দেখছে।
উপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশরা মিশরের অসংখ্য মূল্যবান প্রত্নসম্পদ ও ঐতিহাসিক নিদর্শন ইংলান্ডে নিয়ে যায়, যা বর্তমানে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামসহ বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে। জনমতের দাবি, এসব নিদর্শন মিশরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়া উচিত তাদের প্রকৃত মালিকদের কাছে। এসব সম্পদ ফিরে এলে দেশের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধভাবে উপস্থাপিত হবে এবং জাতীয় গর্ব পুনরুদ্ধার হবে।



