গাজায় যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের কাছ থেকে ফেরত পাওয়া বহু প্যালেস্টিনীয় মৃতদেহে নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসা কর্মী ও মানবিক সংস্থার কর্মকর্তারা।
প্যালেস্টিনীয়–আমেরিকান সহায়তা কর্মী মোরিন কাকি, যিনি চিকিৎসা সংস্থা Glia-এর সঙ্গে গাজায় কাজ করছেন, বলেন — “আমি অন্তত ১০টি দেহ পরীক্ষা করেছি। বেশিরভাগ দেহে ভয়াবহ চিহ্ন ছিল — হাত-পা বাঁধা, আঙুল কাটা, মাথা বিকৃত, এমনকি কারও পায়ে গুলির দাগ।“ তিনি আরও জানান, “এই ক্ষতগুলোর বেশিরভাগই জীবিত অবস্থায় করা হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে যে তারা “আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী” কাজ করে এবং সব অভিযোগ “ভিত্তিহীন প্রচারণা”। ইসরায়েল জানিয়েছে, ফেরত দেওয়া দেহগুলো “যোদ্ধা” বা যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তিদের, তবে গাজার পক্ষ বলছে, অনেকেই ছিলেন সাধারণ নাগরিক যারা আটক অবস্থায় মারা গেছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির আওতায় প্রায় ২৮৫ টি প্যালেস্টিনীয় দেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক দেহে চোখে কাপড় বাঁধা, হাতকড়া পরানো এবং গলায় দড়ির দাগ দেখা গেছে। বেশিরভাগ দেহের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি — তাদের গায়ে কেবল নম্বর স্প্রে করা ছিল।
নাসের হাসপাতালের ফরেনসিক দল বলেছে, এসব দেহের বয়স ২৫ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। অনেক দেহ আংশিক পচে গেছে বা পোড়া ছিল, তবে কিছু দেহ সংরক্ষণের প্রমাণও পাওয়া গেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, “এগুলো শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের মৃত্যু নয়, বরং নির্যাতন ও সম্ভাব্য ফিল্ড এক্সিকিউশনের ঘটনা।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই বন্দি ও মৃতদেহ বিনিময় করছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি মৃত ইসরায়েলির বিনিময়ে ইসরায়েল ১৫ জন প্যালেস্টিনীয় দেহ ফেরত দেবে। বর্তমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে, গাজা ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৮৫ জন ফিলিস্তিনির দেহাবশেষ পেয়েছে, যার বিনিময়ে হামাস কর্তৃক ফেরত পাঠানো ২২ জন ইসরায়েলি এবং তিনজন বিদেশী জিম্মির (মোট ২৫ জন মৃতদেহ) মৃতদেহ পেয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ৬৮,৮৭৫ প্যালেস্টিনীয় নিহত হয়েছেন, ১,৭০,৬৭৯ জন আহত হয়েছে এবং আরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
জাতিসংঘ, রেড ক্রস এবং একাধিক মানবাধিকার সংস্থা ঘটনাটিকে “গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন” হিসেবে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। জাতিসংঘের এক কমিশন জানিয়েছে, “যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরত আসা এই দেহগুলোতে নির্যাতনের প্রমাণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়তে পারে।”



