উত্তর-পশ্চিম কেনিয়ার তুরকানা বেসিনের নামোরোটুকুনান অঞ্চলে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও দীর্ঘস্থায়ী পাথরের অস্ত্রের নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এমন প্রমাণ পেয়েছেন যা ইঙ্গিত দেয়—প্রথম দিকের মানুষরা ছিল প্রকৃতপক্ষে উদ্ভাবক। আন্তর্জাতিক একদল গবেষকের পরিচালিত এই আবিষ্কারে দেখা গেছে, যে প্রায় ২.৭৫ মিলিয়ন বছর আগে ওই অঞ্চলের প্রাচীন মানুষরা টানা ৩ লাখ বছর ধরে পাথরের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। এর আগে ধারণা করা হতো, প্রাচীন মানুষের সরঞ্জাম ব্যবহার ছিল আকস্মিক এবং স্বল্পস্থায়ী। কিন্তু নতুন এই আবিষ্কার দেখিয়েছে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই প্রযুক্তি টিকে ছিল এবং শেখানো হতো।
গবেষণাপত্রটির শিরোনাম “Early Oldowan technology thrived during Pliocene environmental change in the Turkana Basin, Kenya”। এতে বলা হয়েছে, এই পাথরের সরঞ্জামগুলো ছিল প্রাচীন “সুইস আর্মি নাইফ”-এর মতো বহু কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র, যা প্রমাণ করে যে প্রাচীন হোমিনিনরা কঠিন জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেও সফলভাবে টিকে ছিল।
গবেষকেরা দশ বছর ধরে খনন চালিয়ে ১,৩০০টিরও বেশি পাথরের ফ্লেক, হাতুড়িপাথর ও পাথরের কোর উদ্ধার করেছেন। এগুলো তৈরি করা হয়েছিল নদীর তীর থেকে সংগ্রহ করা বিশেষ পাথর দিয়ে, এবং প্রযুক্তিটি পরিচিত ‘ওল্ডোয়ান’ (Oldowan) নামে—যা মানব ইতিহাসের প্রথম বিস্তৃত পাথর-সরঞ্জাম তৈরির কৌশল।
প্রধান গবেষক প্রফেসর ডেভিড আর. ব্রাউন, জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী ও ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের সহযোগী, বলেন— “এই সাইটটি দেখায়, এটি কোনো এককালীন উদ্ভাবন নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী প্রযুক্তিগত ঐতিহ্য। আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম একই দক্ষতা বজায় রেখেছেন।”
সহ-লেখক সুসানা কারভালো, গোরোঙ্গোসা ন্যাশনাল পার্কের বিজ্ঞান পরিচালক, বলেন— “আমাদের প্রাইমেট পূর্বপুরুষদের মধ্যে যন্ত্রের ব্যবহার সম্ভবত ছিল একটি সাধারণ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া, যা তাদের বাঁচতে সাহায্য করেছে।”
অন্য গবেষক ড্যান ভি. পালকু রোলিয়ের যোগ করেন— “নামোরোটুকুনান এক পরিবর্তনশীল পৃথিবীর দলিল। নদী সরে গেছে, আগুন ছড়িয়েছে, জলবায়ু শুষ্ক হয়েছে—তবু প্রায় তিন লাখ বছর ধরে একই ধাঁচের সরঞ্জাম টিকে আছে। এটি প্রমাণ করে, মানুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেছে পরিবর্তনের বিপরীতে স্থিতি বজায় রাখতে।”
প্রধান অনুসন্ধান গুলো হচ্ছে প্রাথমিক হোমিনিনরা ধারালো প্রান্তযুক্ত পাথরের অস্ত্র শত সহস্র বছর ধরে একইভাবে তৈরি করেছে—দক্ষতা ও জ্ঞানের ধারাবাহিক উত্তরাধিকার। আগ্নেয় ছাই, চৌম্বক সংকেত, শিলা-রাসায়নিক গঠন ও উদ্ভিদের ক্ষুদ্র জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাস পুনর্গঠন করা হয়েছে। তীব্র পরিবেশগত পরিবর্তনের মধ্যেও তারা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন খাদ্য, বিশেষ করে মাংস, সংগ্রহ করেছে—যা ছিল বেঁচে থাকার মূল কৌশল।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘Nature Communications’-এ, এই আবিষ্কার মানব ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—প্রযুক্তি শুধু উদ্ভাবনের ফল নয়, বরং টিকে থাকার প্রাচীনতম হাতিয়ার।



