গিনি-বিসাউতে আবারও সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। বুধবার দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছেন যে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার “সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ” নিয়েছেন। তারা প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালোকে গ্রেপ্তার করেছে, সব সীমান্ত বন্ধ করেছে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার মাত্র তিন দিন পরই পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার ও রাজধানীতে গোলাগুলি-
সকালে রাজধানী বিসাউয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশে ভারী গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রাসাদের দিকে যাওয়ার প্রধান সড়কে অবস্থান নেয়। দুপুর নাগাদ প্রেসিডেন্টের সামরিক দপ্তরের প্রধান জেনারেল ডেনিস এন’কানহা সাংবাদিকদের সামনে ঘোষণা করেন যে সেনাবাহিনীর সব শাখা মিলে একটি কমান্ড কাঠামো দেশ পরিচালনা করবে “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত”।
সামরিক সূত্র জানায়, পুনর্নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকা প্রেসিডেন্ট এমবালোকে আটক করে সেনা সদর দপ্তরে রাখা হয়েছে এবং তাকে “ভালোভাবে দেখাশোনা করা হচ্ছে”। সেনাবাহিনীর প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও আটক করা হয়েছে।
বিরোধী নেতা পেরেইরাও আটক-
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে আদালত কর্তৃক বাদ পড়া বিরোধী নেতা ডোমিঙ্গোস সিমোয়েস পেরেইরাকেও বুধবার আটক করা হয়। তিনি ভোটে অংশ নিতে না পারায় বিরোধী প্রার্থী ফার্নান্দো ডায়াসকে সমর্থন দিয়েছিলেন। এমবালো ও ডায়াস—উভয়েই আগেই নিজেদের বিজয় দাবি করেছিলেন। আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক ফলাফল বৃহস্পতিবার প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল।
কারফিউ, সীমান্ত বন্ধ ও গণমাধ্যম নিষিদ্ধ-
সামরিক ঘোষণায় বলা হয়, দেশ অস্থিতিশীল করার একটি পরিকল্পনা ধরা পড়েছে, যেখানে “ড্রাগ লর্ড”দের জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অস্ত্র আমদানির প্রচেষ্টা ছিল বলে জানায় সেনাবাহিনী।
সেনারা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে, গণমাধ্যমের সব সম্প্রচার বন্ধ করেছে এবং স্থল, জল ও আকাশ—সব ধরনের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি বাধ্যতামূলক কারফিউ জারি করা হয়েছে। দিনের শেষে বিসাউয়ের রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা, এবং সেনারা সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ-
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পরিস্থিতি নিয়ে “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করেছেন এবং সব পক্ষকে সংযম ও আইনের শাসন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। সাবেক উপনিবেশিক শক্তি পর্তুগালও নির্বাচনী প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানায়।
এছাড়াও আফ্রিকান ইউনিয়ন, ইকোওয়াস এবং ওয়েস্ট আফ্রিকান এল্ডারস ফোরামের পর্যবেক্ষক দল যৌথ বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার প্রচেষ্টা হিসেবে এই অভ্যুত্থানকে “গভীর উদ্বেগজনক” বলে মন্তব্য করেছে।
দীর্ঘদিনের অস্থিরতা ও সামরিক হস্তক্ষেপ-
স্বাধীনতার পর থেকে গিনি-বিসাউ চারবার সফল অভ্যুত্থান এবং বহুবার ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনা দেখেছে। ২০২৩ সালে এমবালো বিরোধী নিয়ন্ত্রিত সংসদ ভেঙে দিয়ে ডিক্রি দ্বারা দেশ পরিচালনা শুরু করেন। বিরোধীদের দাবি, এমবালোর ক্ষমতার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে প্রভাবশালী দল PAIGC-কে বাদ দেওয়াও ছিল রাজনৈতিক কৌশল।
পশ্চিম আফ্রিকার এই অঞ্চল সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভ্যুত্থানের ঢেউয়ে কাঁপছে—মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার এবং গিনিতেও সরকার পতন ঘটেছে।
গিনি-বিসাউয়ের সর্বশেষ এই অস্থিরতা দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।



