ইথিওপিয়ার উত্তরাঞ্চলে ১২ হাজার বছর ধরে নিস্ক্রিয় থাকা হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাত করেছে। রোববার সকালে হওয়া এই অগ্ন্যুৎপাত ঘন্টাব্যাপী স্থায়ী হয় এবং বিশাল ধোঁয়া-ছাইয়ের মেঘ আকাশে উঠে যায় প্রায় ৪৫,০০০ মিটার (১,৪৮,০০০ ফুট) পর্যন্ত। ছাইয়ের মেঘ ভেসে গেছে লোহিত সাগর পেরিয়ে ইয়েমেন, ওমান, ভারত ও পাকিস্তান পর্যন্ত।
রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে আফার অঞ্চলের এই অগ্ন্যুৎপাত প্রাণহানি ঘটায়নি। তবে স্থানীয় গ্রাম আফদেরা ছাইয়ে ঢেকে গেছে। বাসিন্দা আহমেদ আবদেলা জানান, “হঠাৎ মনে হয়েছিল একটা বোমা বিস্ফোরিত হলো। এরপর সবদিকে ধোঁয়া ও ছাই।”
স্থানীয় প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদ বলেন, ছাইয়ে ঢেকে যাওয়ায় এলাকার পশুপালকদের জন্য গুরুতর খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে। “মানুষ বা পশুর প্রাণহানি হয়নি, কিন্তু ছাইয়ের আস্তরণে পশুর খাবার নষ্ট হয়ে গেছে,” বলেন তিনি।
আফার টিভির খবর অনুযায়ী, আফার ছাড়াও ইথিওপিয়ার ওলো, তিগ্রাই অঞ্চলে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ জিবুতিতেও মাঝারি কম্পন অনুভূত হয়।
১২ হাজার বছর পর জেগে উঠল হাইলি গুব্বি। শিল্ড-ধরনের এই আগ্নেয়গিরিটি এরতা আলে রেঞ্জের অংশ, যার মধ্যে ইথিওপিয়ার সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এরতা আলেও অবস্থিত। স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের গ্লোবাল ভলকানিজম প্রোগ্রাম জানায়, হাইলি গুব্বির এর আগে হোলোসিন যুগে (গত ১২,০০০ বছর) কোনো অগ্ন্যুৎপাতের রেকর্ড নেই।
স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, ছাইয়ের মেঘ পূর্বদিকে সরে ভারত মহাসাগর পেরিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশে পৌঁছেছে।
ভারতের রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ছাইয়ের প্রভাব দেখা গেছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, আকাসা সহ বেশ কিছু এয়ারলাইন্স একাধিক ফ্লাইট বাতিল করেছে। ভারতের বিমান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা DGCA বিমানগুলোকে প্রভাবিত রুট এড়িয়ে উড়তে নির্দেশ দিয়েছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া দফতর জানায়, সোমবার রাতে গওয়াদারের দক্ষিণে প্রায় ১১১ কিলোমিটার দূর থেকে ছাইয়ের মেঘ দেখা গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে এয়ার আরাবিয়া কিছু ফ্লাইট বাতিল করেছে। ওমান পরিবেশ কর্তৃপক্ষ জরুরি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করেছে, যদিও এখনো বড় ধরনের প্রভাব পাওয়া যায়নি।
এর আগে ২০১০ সালে আইসল্যান্ডের এয়াফিয়াতলাজোকুল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর ইউরোপে আকাশপথে নজিরবিহীন বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। ছাইয়ের কারণে যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ কয়েকদিনের জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দেয়, বাতিল হয়েছিল প্রায় ৯৫,০০০ ফ্লাইট।
ইথিওপিয়ার আফার কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো প্রাণহানি বা বড় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দেয়নি। তবে ছাইয়ের ব্যাপকতা, পশুখাদ্য সংকট এবং স্থানীয় পর্যটন কার্যক্রমে প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।



