ইসরায়েলের একটি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার হাইতম আলি তাবাতাবাই নিহত হয়েছেন বলে লেবানন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। বৈরুতের দক্ষিণ উপশহর দাহিয়ের হরেত হরাইক এলাকায় রবিবার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে এই হামলা চালানো হয়।
লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানায়, আক্রমণে অন্তত পাঁচ জন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছেন। আক্রান্ত ভবন ও আশপাশের এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জাতীয় সংবাদ সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ এক বিবৃতিতে তাবাতাবাইকে “মহান কমান্ডার” হিসেবে উল্লেখ করে জানায়, তিনি একটি “বিশ্বাসঘাতক ইসরায়েলি হামলায়” নিহত হয়েছেন। তাবাতাবাই হিজবুল্লাহর সামরিক কাঠামোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে বিবেচিত হতেন এবং ২০২৪ সালের যুদ্ধের পর থেকে তিনি ছিলেন সংস্থাটির সবচেয়ে উচ্চপদস্থ নিহত কমান্ডার।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তাবাতাবাইকে “নির্মূল” করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, তিনি হিজবুল্লাহর সামরিক পুনর্গঠন ও অস্ত্রসজ্জা কার্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন।
হামলাকে “লাল দাগ অতিক্রম” বলে মন্তব্য করেছেন হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক কাউন্সিলের সদস্য মাহমুদ কোমাতি। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই আক্রমণ “সারা লেবাননে নতুন মাত্রার হামলার দরজা খুলে দিয়েছে।”
বৈরুত থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় লেবাননে উদ্বেগ বাড়ছে। হিজবুল্লাহ জটিল অবস্থায় রয়েছে—প্রতিশোধ নিলে বড় ধরনের যুদ্ধের ঝুঁকি, আর না নিলে আরও হামলার সম্ভাবনা বাড়বে।
বিশ্লেষকদের মতে, হিজবুল্লাহ তাত্ক্ষণিক প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত নয়, কারণ বড় আকারের যুদ্ধ ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সুবিধা দিতে পারে এবং লেবাননের জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসরায়েলি হামলা দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল একাধিকবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ও মাঝে মাঝে বৈরুতে হামলা চালিয়েছে। লেবাননের হিসেবে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ৩৩০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় এক হাজার জন আহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহ প্রায় এক বছর ধরে কোনো বড় আকারের প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়নি। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, হিজবুল্লাহ অস্ত্র ও সামরিক সক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে, যা নতুন সামরিক অভিযানের অজুহাত হতে পারে।
রবিবারের হামলার মাত্র কয়েকদিন পরই পোপ লিও চতুর্দশের লেবানন সফর নির্ধারিত থাকায় পরিস্থিতি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।



