২,৫০০ বছর পুরোনো মাটির তৈরি সাইরাস সিলিন্ডারকে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মানবাধিকার সনদ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো।সাইরাস সিলিন্ডারটি বর্তমানে লন্ডনের ব্রিটিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। উজবেকিস্তানের সমরকন্দে ৬ নভেম্বর ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনে ইরান, তাজিকিস্তান ও ইরাকের দুই দশকের প্রচেষ্টার ফল হিসেবে সর্বসম্মতভাবে এই ঐতিহাসিক নিদর্শনকে আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
রাগবি বলের আকারের এই ভঙ্গুর মাটির সিলিন্ডারটি প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে পারস্য সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট কর্তৃক রচিত যা একটি ব্যাবিলনীয় মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তরে সমাহিত করা হয়েছিল। ১৮৭৯ সালে ব্রিটিশ জাদুঘরের পৃষ্ঠপোষকতায় ইরাকে খনন কার্য চালিয়ে এটি আবিষ্কার করে। আক্কাদীয় কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা এই ঘোষণায় তিনি বন্দীদের মুক্তি, নির্বাসিত জনগোষ্ঠীর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন, বিভিন্ন ধর্মের দেবস্থান পুনর্নির্মাণ এবং স্বাধীন উপাসনার অধিকার নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি মানবাধিকার, ধর্মীয় সহনশীলতা ও বহু-ধর্মবিশ্বাসী রাষ্ট্র ধারণার প্রাচীনতম লিখিত উদাহরণ।
সাইরাসের এই ঘোষণার ফলে ব্যাবিলনে বন্দী ইহুদিরা জেরুজালেমে ফিরে গিয়ে মন্দির পুনর্নির্মাণের অনুমতি পায়—যা বাইবেলেও লিপিবদ্ধ রয়েছে।
ইরান, তাজিকিস্তান ও ইরাকের যৌথ উদ্যোগ
দীর্ঘ ২০ বছরের কূটনৈতিক ও গবেষণামূলক প্রচেষ্টার পর তিন দেশের প্রতিনিধিরা এই প্রাচীন সনদকে বৈশ্বিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সক্ষম হন। ইরানের প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাইরাসের শাসনব্যবস্থা মানবিকতা, দয়া, সহনশীলতা ও ন্যায়ের নীতি অনুসরণে অনন্য উদাহরণ।
পাসারগাদ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের কর্মকর্তাদের মতে, সাইরাস সিলিন্ডার আজ বিশ্বের কাছে শান্তি, সহাবস্থান ও মানব মর্যাদা রক্ষার প্রতীক। সাইরাসের সমাধিস্থলকে এখন ‘ইন্টারকালচারাল ডায়ালগ’-এর বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
ইতিহাসবিদ নিল ম্যাকগ্রেগর বলেন, সাইরাস সিলিন্ডারের গুরুত্ব এর বহুস্তরীয় ব্যাখ্যায়: কারও কাছে এটি পারস্য সাম্রাজ্যের মহিমার প্রতীক, আবার কারও কাছে ধর্মীয় সহনশীলতার প্রথম রাষ্ট্রীয় ঘোষণা।



