রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থাপিত ২৮ দফা নতুন শান্তি প্রস্তাবকে ঘিরে ইউক্রেন ও ইউরোপে তীব্র অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবে কিয়েভকে কয়েকটি বড় ছাড় দিতে বলা হয়েছে—যা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার কিয়েভে মার্কিন সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরিকল্পনার মূল দিকগুলো উপস্থাপন করেছে। তিনি বলেন, “আমরা আলোচনায় অংশ নেব, তবে আমাদের ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির নীতিই অটুট থাকবে।”
জেলেনস্কি আরও সতর্ক করেন যে ইউক্রেন এখন “ইতিহাসের অন্যতম কঠিন সিদ্ধান্তের” মুখোমুখি—নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করা নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারানোর ঝুঁকি নেওয়া। তিনি বলেছেন, কিয়েভ বিকল্প প্রস্তাব তৈরির কাজ করছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জেলেনস্কিকে আশ্বস্ত করেছেন যে শান্তির বিষয়ে কিয়েভ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাস বলেন, “কোনো কার্যকর পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে ছাড় দেওয়া চলবে না। এখানে এক পক্ষ আগ্রাসী, অন্য পক্ষ ভুক্তভোগী—এটাই বাস্তবতা। ইউরোপ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব পায়নি বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। ফলে দেশগুলো মন্তব্যে এখনো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
মস্কো বলছে, তারা পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে পায়নি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেছেন, “কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।” একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন—জেলেনস্কির জন্য আলোচনার সুযোগ দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে অসংখ্য অস্পষ্ট, অপরিণত ও বাস্তবায়ন-অযোগ্য শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বড় অংশ রাশিয়ার দখলে স্বীকৃতি দেওয়া, কিয়েভের সামরিক বাহিনী দুর্বল করা, এমনকি যুদ্ধাপরাধের জন্য সকল পক্ষকে ‘ক্ষমা’র প্রস্তাব।
সবচেয়ে বিতর্কিত দফাগুলোর মধ্যে রয়েছে: ক্রিমিয়া, লুহানস্ক ও দনেস্ককে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি, যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের পূর্ণ ক্ষমা, রাশিয়াকে আবার জি৮-এ ফেরানোর প্রস্তাব, রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার দিয়ে পুনর্গঠন ২০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল যার ৫০% লাভ যুক্তরাষ্ট্রের হবে।
বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন—যদি এই ধরনের পরিকল্পনা চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা বিশ্বব্যাপী আগ্রাসীদের উৎসাহিত করবে।
অন্যদিকে রাশিয়ার সামরিক হামলা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার জাপোরিঝিয়া শহরে রুশ ‘গ্লাইড বোমা’ হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। ওডেসাতেও ড্রোন আক্রমণে পাঁচজন আহত হয়েছে।



