ওয়াশিংটনে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক ঘিরে মঙ্গলবার দেখা গেছে অভূতপূর্ব আড়ম্বর, রাজনৈতিক বার্তা ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক-বাণিজ্যিক ঘোষণা। কাশোগ্গি হত্যাকাণ্ডসহ বিতর্কিত বিষয়গুলো পাশে রেখে দুই নেতা জোর দিয়েছেন ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিতে।
বৈঠকে ট্রাম্প ও এমবিএস দুজনেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে আগ্রহী। তবে রিয়াদ পরিষ্কার জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের আগে ফিলিস্তিনের জন্য একটি “বিশ্বস্ত দুই রাষ্ট্র সমাধানের রূপরেখা” নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাম্প বলেন, “এক রাষ্ট্র, দুই রাষ্ট্র—সব বিষয়েই ভালো আলোচনা হয়েছে।”
হোয়াইট হাউসের নৈশভোজে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে “মেজর নন-ন্যাটো অ্যালাই” মর্যাদা দিচ্ছে। এ মর্যাদা পেলে সামরিক সরঞ্জাম কেনা ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় দেশটি বিশেষ সুবিধা পায়।
এদিকে দুই দেশ একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছে, যার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন যে সৌদি আরবকে উন্নত এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হবে। ইসরায়েলের ‘কোয়ালিটেটিভ মিলিটারি এজ’ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ট্রাম্প বলেন, দু’দেশই “শীর্ষ মানের” সরঞ্জাম পাওয়ার যোগ্য। সৌদির সঙ্গে প্রায় ৩০০ ট্যাংক ক্রয়-সংক্রান্ত চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনার মাঝেও ট্রাম্প বলেন, তেহরান “সমঝোতা চায়” এবং যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার জন্য প্রস্তুত। এমবিএস জানান, মার্কিন-ইরান সমঝোতাকে সৌদি আরব সমর্থন করবে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা পরে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। এমবিএসও নিশ্চিত করেন যে প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, খনিজ এবং শিল্পক্ষেত্রে বিশাল বিনিয়োগ আসবে।
২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল কাশোগ্গি হত্যাকাণ্ডের পর এটি এমবিএসের প্রথম হোয়াইট হাউস সফর। এ ঘটনার প্রশ্ন এলে ট্রাম্প সাংবাদিককে তিরস্কার করেন এবং কাশোগ্গিকে “বিতর্কিত ব্যক্তি” বলে মন্তব্য করেন।
এমবিএস বলেন, “এটি ছিল বড় একটি ভুল এবং আমরা নিশ্চিত করেছি যেন এমন কিছু আবার না ঘটে।”
লালগালিচা, সামরিক ব্যান্ড, অশ্বারোহী বাহিনী ও বিমানবাহিনীর ফ্লাইওভার—সব মিলিয়ে এমবিএসকে অভ্যর্থনা জানাতে ট্রাম্প ব্যবহার করেছেন পূর্ণ প্রটোকলের প্রদর্শনী। ডিনারে উপস্থিত ছিলেন প্রযুক্তি ও ক্রীড়া জগতের শীর্ষ ব্যক্তিরা—এলন মাস্ক, জেনসেন হুয়াং, টিম কুকসহ আরও অনেকে।
ট্রাম্প-এমবিএস বৈঠক মূলত সামরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক কূটনীতি ও বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগের ওপর কেন্দ্রিত ছিল। মানবাধিকার ও কাশোগ্গি হত্যাকাণ্ডের মতো জটিল বিষয়গুলোকে ট্রাম্প একরকম গুরুত্বহীন হিসেবে তুলে ধরলেও দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়ার বার্তা স্পষ্ট।



