বিজ্ঞানে নতুন মাত্রা যোগ হলো এক মহাজাগতিক ঘটনার মাধ্যমে। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি নথিভুক্ত করেছেন সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল থেকে নির্গত সবচেয়ে শক্তিশালী ফ্লেয়ার বা আলোর বিস্ফোরণ, যা একসময় ঝলসে উঠেছিল ১০ ট্রিলিয়ন সূর্যের সমপরিমাণ আলো নিয়ে। এই মহা-বিস্ফোরণের ফলে জানা গেলো, যখন বিশাল কোনো তারা ব্ল্যাক হোলের খুব কাছে চলে আসে, তখন কী ঘটে।
নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী ম্যাথিউ গ্রাহাম। গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৩০০ মিলিয়ন সূর্যের ভরের সমান ব্ল্যাক হোলটি এই বিপুল শক্তির বিস্ফোরণের কেন্দ্রস্থল। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সিতে অবস্থিত।
গবেষণায় সংশ্লিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী কে ই সাভিক ফোর্ড বলছেন, “তারা ব্ল্যাক হোলের কাছে আসার পর ‘স্প্যাগেটিফাইড’ হয়ে লম্বা সরু আকৃতিতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এর পর সেই তারার গ্যাসঘন পদার্থ ব্ল্যাক হোলের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে তাপ উৎপন্ন করে এবং অতি উজ্জ্বল আলো বিকিরণ করে।”
এই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ফ্লেয়ারটি ২০১৮ সালে ক্যালটেকের পালোমার অবজারভেটরি থেকে প্রথম লক্ষ্য করা হয়। প্রায় তিন মাস ধরে এটি আলোর সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়, যা আগের যেকোনো সমজাতীয় মহাজাগতিক ঘটনার তুলনায় প্রায় ৩০ গুণ বেশি উজ্জ্বল। যদিও এখন তা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হচ্ছে, পুরো ঘটনাটি শেষ হতে আরও প্রায় ১১ বছর সময় লাগতে পারে।
এই ঘটনা বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিরল সুযোগ তৈরি করেছে। এত দূরের ব্ল্যাক হোল পর্যবেক্ষণ করে প্রাচীন ব্রহ্মাণ্ডের শুরুর দিকের তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি এটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের গঠন, তারা ও গ্যালাক্সির ওপর তাদের প্রভাব এবং মহাবিশ্বের বিকাশ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এমন মহাযজ্ঞের প্রতিটি পর্যবেক্ষণ মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।



