হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার মধ্যে সোমবার অনুষ্ঠিত বৈঠক মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো কোনো সিরিয়ান প্রেসিডেন্টের হোয়াইট হাউস সফর ছিল এটি।
শারা, যিনি মাত্র এক বছর আগে বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সিরিয়ার নেতৃত্বে আসেন, এখন তার দেশের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ভাঙতে কাজ করছেন। বৈঠকে তিনি সিরিয়ার ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের অবশিষ্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল সিরিয়াকে আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত করা—যার মাধ্যমে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কৌশলগত ভারসাম্য তৈরি হবে এবং ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব সীমিত করা সম্ভব হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকে আইএসবিরোধী জোটে সিরিয়ার অংশগ্রহণ, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক, এবং গোলান মালভূমি ইস্যু মূল আলোচ্য ছিল।
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ রোলা মেরহেজ বলেন, “শারা অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান। এর বিনিময়ে ওয়াশিংটন সিরিয়ার কাছ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিশ্রুতি ও ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক অগ্রগতির প্রত্যাশা করছে।”
বৈঠকের পর ওয়াশিংটন সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশ একটি প্রাথমিক সমঝোতা চুক্তি করেছে, যাতে সিরিয়া ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনে যুক্ত হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারে। তবে গোলান মালভূমি নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
সিরিয়ার পুনর্গঠনে বিশ্বব্যাংক অনুমান করেছে, প্রয়োজন হবে অন্তত ২১৬ বিলিয়ন ডলার। ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বন্দর, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনে শারার এই সফর শুধু সিরিয়ার নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সিরিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন নতুন আঞ্চলিক ব্যবস্থার অংশ হতে চলেছে, যেখানে ইরান ও রাশিয়ার প্রভাব কমে যাবে।
শারার এই সফর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কূটনৈতিক যুগের সূচনা করতে পারে—যেখানে একসময়ের মার্কিন-বিরোধী বিদ্রোহী নেতা আহমেদ আল-শারা এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৌশলগত অংশীদার হিসেবে উঠে আসছেন।



