নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় অর্জন করেছেন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট জোহরান মামদানি। ৩৪ বছর বয়সী এই রাজনীতিক সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে পরাজিত করে শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং শতাধিক বছরে সবচেয়ে তরুণ মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
মামদানি স্বতন্ত্র প্রার্থী কুয়োমো ও রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়াকে হারিয়ে সুস্পষ্ট ব্যবধানে বিজয়ী হন। মঙ্গলবারের এই নির্বাচনে পাঁচ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি দেখা গেছে — দুই মিলিয়নেরও বেশি নিউইয়র্কবাসী ভোট দেন।
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রগতিশীল অংশের জন্য এটি এক বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। মামদানি নিজেকে “ডেমোক্র্যাটিক সমাজতন্ত্রী” হিসেবে পরিচয় দেন এবং তার প্রচারণা চালান শহরবাসীর জীবনযাত্রা সাশ্রয়ী করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে। তার নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে শিশু যত্ন, ফ্রি বাস সার্ভিস, ভাড়া নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে ভাড়া স্থির রাখা, এবং মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে জরুরি সেবার নতুন ব্যবস্থা গঠন।
বিজয় ভাষণে মামদানি বলেন, “আমরা একটি নতুন রাজনীতির সূচনা করেছি — এমন এক রাজনীতি যা মানুষের কথা শোনে, অবজ্ঞা করে না। এই শহর সবার, এই গণতন্ত্রও সবার।” তিনি আরও বলেন, “আমি প্রতিদিন সকালে এই শহরকে আগের দিনের চেয়ে আরও ভালো করার সংকল্প নিয়ে ঘুম থেকে উঠব।”
তিনি নিউইয়র্কের অভিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গ, ইহুদি ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। “এই সিটি হল হবে সবার জন্য, যেখানে এক মিলিয়নের বেশি মুসলিম জানবে — এই শহর তাদেরও,” বলেন মামদানি।
অন্যদিকে, সাবেক গভর্নর কুয়োমো পরাজয় স্বীকার করে মামদানিকে অভিনন্দন জানান। তবে তিনি পুরো প্রচারণা জুড়ে মামদানির অভিজ্ঞতা ও ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করেন।
জোহরান মামদানি উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশবে নিউইয়র্কে বড় হন। তিনি ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন এবং বর্তমানে রাজ্যের অ্যাসেম্বলিম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আগামী ১ জানুয়ারি মামদানি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার সামনে চ্যালেঞ্জ হবে প্রতিশ্রুত সামাজিক কর্মসূচিগুলোর অর্থায়ন নিশ্চিত করা এবং বৃহত্তর শহর প্রশাসন পরিচালনার বাস্তবতা মোকাবিলা করা।
তবে মঙ্গলবার রাতে বিজয় উদযাপনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মামদানি বলেছিলেন, “আমরা একটি রাজনৈতিক বংশকে পরাজিত করেছি — এখন আমাদের কাজ এই শহরকে সবার জন্য বাসযোগ্য করে তোলা।”



