গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার জন্য আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বা স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের বিষয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। সোমবার তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সাতটি আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে অংশ নেয় তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বৈঠক শেষে জানান, গাজায় প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনী নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। এই বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনার অংশ। তবে বাহিনীর কাঠামো, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এখনো নির্ধারিত হয়নি।
ফিদান বলেন, “এই বাহিনী গঠনের আগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব প্রয়োজন, যা এর বৈধতা দেবে। আমরা এই প্রস্তাবের বিষয়বস্তু অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব যে সেনা পাঠানো হবে কি না।”
তুরস্ক ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলো স্পষ্টভাবে জানতে চায়—এই বাহিনীর কাজের পরিধি কী হবে, এবং সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে বাহিনীর সদস্যরা কীভাবে নিজেদের রক্ষা করবে। ফিদানের ভাষায়, “আমরা শান্তির জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, তবে আমাদের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকতে হবে।”
ইস্তানবুল বৈঠকের অন্যতম লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিরতি রক্ষা করা এবং গাজার ভেতরে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো। যদিও অক্টোবরের ১০ তারিখ থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকার কথা, ইসরায়েল একাধিকবার তা লঙ্ঘন করেছে। সাম্প্রতিক হামলায় ১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪৬ জন শিশু। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২৩৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ইসরায়েলের ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল ২০০-র বেশি নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে। পশ্চিম তীরে দখল, জেরুজালেমের অবস্থান পরিবর্তন কিংবা আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা নষ্টের প্রচেষ্টা আমরা মেনে নেব না।”
ইসরায়েল গাজায় তুর্কি সেনা মোতায়েনের ধারণার তীব্র বিরোধিতা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার বিকল্প হিসেবে আজারবাইজানের সেনা অংশগ্রহণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এরই মধ্যে গাজায় মুক্তিপ্রাপ্ত ৫ জন ফিলিস্তিনি বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের আবেগঘন দৃশ্য দেখা গেছে, যা যুদ্ধবিরতির পর কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে। তবে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা এখনো সূচনা পর্যায়েই রয়েছে।



