ইসরায়েলের একটি বিমান হামলায় দক্ষিণ লেবাননে অন্তত চারজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছে। শনিবার লেবাননের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, নাবাতিয়েহ জেলার কফারসির শহরে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে (স্থানীয় সময়) একটি গাড়িতে “নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র” নিক্ষেপ করা হয়। হামলার দায় ইসরায়েলের ওপর দিয়েছে লেবানন সরকার, যা প্রায় এক বছর ধরে চলা যুদ্ধবিরতিকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত লেবানন নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হামলা এমন সময় ঘটল যখন লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আওন সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে স্থায়ী শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, আলোচনার আহ্বানের পর থেকেই ইসরায়েল হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে।
২০২৩ সালে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর হিজবুল্লাহ গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ শুরু করে। বছরের পর বছর সংঘাতের পর ২০২৪ সালের নভেম্বরে উভয় পক্ষ একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। তবে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি এলাকায় সৈন্য মোতায়েন রেখে প্রায় প্রতিদিনই বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে অন্তত ১১১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট আওন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, তা কার্যকর রাখতে হলে ইসরায়েলকে “অবৈধ দখল” শেষ করতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করছে, লেবাননের সরকার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে, আওন এই সপ্তাহে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, ইসরায়েলি সেনারা যদি দক্ষিণ সীমান্তে নতুন করে প্রবেশ করে, তবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইসরায়েলি বাহিনী ব্লিদা শহরে প্রবেশ করে টাউন হল দখল করে এবং সেখানে ঘুমন্ত অবস্থায় এক পৌর কর্মী ইব্রাহিম সালামেহকে গুলি করে হত্যা করে।
অন্যদিকে গাজা উপত্যকায়ও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। খান ইউনিসের পূর্ব অংশে ইসরায়েলি বাহিনী ভারী গোলাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, যেখানে হামাস যোদ্ধারা আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও মিশরীয় প্রযুক্তি দলের সহায়তায় বন্দিদের মরদেহ অনুসন্ধান করছে। রাফা ও বেইত লাহিয়াতেও বিমান ও আর্টিলারি হামলার খবর পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের কথা থাকলেও, বাস্তবে ইসরায়েল গড়ে মাত্র ১৪৫ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে—যা মোট চুক্তির মাত্র ২৪ শতাংশ।
এদিকে আগামী সোমবার ইস্তানবুলে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন, যেখানে গাজা যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে আলোচনা হবে।



