ঢাকা, ৩০ অক্টোবর ২০২৫: নিজস্ব প্রতিবেদক
সুদানের এল-ফাশেরে ‘গণহত্যা’: আরএসএফের হাতে কমপক্ষে ২,০০০ নিহত, জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ।
সুদানের পশ্চিম দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশের শহরে রেপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)–এর হাতে গত তিন দিনে অন্তত ২,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্ক। সংস্থাটি ঘটনাকে বর্ণনা করেছে “একটি প্রকৃত গণহত্যা” হিসেবে।
ডক্টরস নেটওয়ার্কের দাবি, আরএসএফ শহর দখলের পর পালাতে চাওয়া সাধারণ মানুষদের উপর নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। তারা জানায়, “বর্তমান হত্যাযজ্ঞ হলো দেড় বছর আগের সেই হত্যাকাণ্ডেরই ধারাবাহিকতা, যখন ১৪ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ বোমা হামলা, অনাহার ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে প্রাণ হারিয়েছিল।”
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব (HRL) জানিয়েছে, এল-ফাশেরে আরএসএফের প্রবেশের পর তোলা স্যাটেলাইট চিত্রে শত শত দেহাবশেষের মতো বস্তু ও মাটিতে রক্তের দাগ দেখা গেছে। ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক নাথানিয়েল রেমন্ড বলেছেন, “ছবিতে যে বস্তুগুলো দেখা গেছে, সেগুলোর দৈর্ঘ্য ১.৫ থেকে ২ মিটার—একজন মানুষের গড় দৈর্ঘ্যের সমান। এগুলো ৪৮ ঘণ্টা আগেও সেখানে ছিল না।”
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা গেছে আরএসএফ যোদ্ধারা পালাতে থাকা বেসামরিক লোকজনকে গুলি করছে। সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্যটি এসেছে সৌদি হাসপাতাল থেকে, যেখানে আরএসএফ সদস্যরা ভেতরে ঢুকে রোগী, চিকিৎসক ও আশ্রয়প্রার্থীদের গুলি করে হত্যা করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়েসুস জানান, শুধু ওই হাসপাতালেই ৪৬০ জন নিহত হয়েছে।
সুদান ডক্টরস ইউনিয়নের প্রাথমিক কমিটি বলেছে, আরএসএফ শহর দখলের পর প্রায় ২,০০০ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। অনেককে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, এমনকি কিছু লোককে নিজেদের কবর খুঁড়ে তাতে জীবিত অবস্থায় সমাধিস্থ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, প্রধান হাসপাতালে ৪৫০ রোগী ও আহত ব্যক্তিকে সরাসরি হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে ১,২০০ বৃদ্ধ, অসুস্থ ও আহত মানুষকে ফিল্ড ক্লিনিকে হত্যা করা হয়। হাসপাতাল ও ফার্মেসি লুট করা হয়েছে।
প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এখনো শহরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পালাতে গিয়ে অনেকেই নিজেদের গাড়িসহ পুড়ে মারা গেছেন। গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রায় ২৮ হাজার মানুষ শহর ছেড়েছেন বলে জানা গেছে।
সৌদি আরব, মিসর, কাতার, তুরস্ক ও জর্ডান আরএসএফের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
সৌদি আরব “গভীর উদ্বেগ” প্রকাশ করে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। মিসর অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুরস্ক ও কাতার বেসামরিক হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।
আরএসএফ সুদানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ২০২৩ সাল থেকে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত। এতে এ পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষ নিহত ও ১ কোটি ২০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আরএসএফ মূলত দারফুর গণহত্যার সময় সক্রিয় সরকারঘনিষ্ঠ জানজাউইদ মিলিশিয়ার উত্তরসূরি, যাদের বিরুদ্ধে ২০০০-এর দশকেও গণহত্যার অভিযোগ ছিল।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এল-ফাশের পতনের পর আরএসএফ এখন প্রায় পুরো দারফুর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যা সুদানের আরও একবার বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
এল-ফাশেরের হত্যাযজ্ঞ শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং এটি আফ্রিকার রাজনৈতিক ও ভূ-সম্পদকেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের নতুন দিক উন্মোচন করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ না হলে এই “গণহত্যা” আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করছেন।



