সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশের শহরটি দখলের দাবি করেছে আধাসামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)। জাতিসংঘ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শত-সহস্র বেসামরিক নাগরিকের নিরাপদ সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার জানিয়েছেন, শহরটি প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ ছিল এবং বর্তমানে হাজার হাজার মানুষ সেখানে আটকে আছেন। তিনি বলেন, “মানুষ এখন প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছে—গোলাগুলির মধ্যে, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে।”
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের বলেন, “সুদানে পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি এক ভয়ংকর সংঘাতের দিকে যাচ্ছে।” তিনি সকল দেশকে অনুরোধ করেন, যারা সংঘাতে অস্ত্র সরবরাহ করছে, তারা যেন তা বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
রয়টার্স ও আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, RSF সম্প্রতি সুদানি সেনাবাহিনীর (SAF) ‘ষষ্ঠ পদাতিক ডিভিশন’ ঘাঁটিটি দখল করেছে, যা পশ্চিমাঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত ছিল। RSF-এর মুখপাত্র এ ঘটনাকে “সুদানের নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের পথে এক বড় পদক্ষেপ” বলে দাবি করেন।
অন্যদিকে, সুদানের সরকারি সংবাদ সংস্থা সুনা (SUNA) তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, RSF-এর দখলের দাবি “মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ” ছাড়া কিছু নয়। মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, “বিদ্রোহীরা বিভিন্ন স্থানে পরাজিত হয়েছে।”
তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এল-ফাশের দখল RSF-এর জন্য বড় সাফল্য এবং এটি দারফুর অঞ্চলে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে সুদানের গৃহযুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে এবং বেসামরিক প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, RSF-র যোদ্ধারা শহরে জাতিগত ভিত্তিতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যদিও তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। দারফুরের গভর্নর মিন্নি মিনাওয়ি আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, “বেসামরিকদের সুরক্ষা এখন সবচেয়ে জরুরি।”
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সুদানের গৃহযুদ্ধে ইতিমধ্যে দশ হাজারের বেশি মানুষ নিহত, ১ কোটি ২০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত, এবং ৩ কোটি মানুষ মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল—যা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।



