নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:
স্ত্রী সামিরা হকসহ মোট ১১ জনকে অভিযুক্ত করে রমনা থানায় এজাহার
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের চিরসবুজ নায়ক সালমান শাহ (শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন)-এর রহস্যজনক মৃত্যুর প্রায় ২৯ বছর পর ঘটনাটি নতুন মোড় নিয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাঁর ‘অপমৃত্যু’ মামলা এবার ‘হত্যা মামলা’ হিসেবে দায়ের করা হয়েছে। মামলার এজাহারে প্রয়াত নায়কের স্ত্রী সামিরা হকসহ মোট ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর, ২০২৫) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ নির্দেশের পর মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মধ্যরাতে রাজধানীর রমনা থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুম।
আদালতের ঐতিহাসিক নির্দেশ:
দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে সালমান শাহের মৃত্যু ‘আত্মহত্যা’ হিসেবেই বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা (সিআইডি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত, পিবিআই) কর্তৃক আদালতে প্রতিবেদন আকারে দাখিল করা হয়েছিল। সর্বশেষ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনেও এটিকে আত্মহত্যা বলা হয়। তবে এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই নারাজি জানিয়ে আসছিলেন সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত নীলা চৌধুরীর রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে পূর্ববর্তী তদন্ত প্রতিবেদন খারিজ করে দেন। আদালত পর্যবেক্ষণে জানান, সালমান শাহের বাবার অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ অন্যান্য আলামত ও নথি পর্যালোচনা করে এটিকে হত্যা মামলা হিসেবে এজাহার গ্রহণ করা এবং পুনরায় তদন্ত করা আবশ্যক। এই আদেশের ভিত্তিতেই রমনা মডেল থানাকে হত্যা মামলা রুজু করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মামলার প্রধান অভিযুক্তরা:
নায়কের মামা আলমগীর কুমকুম কর্তৃক দায়ের করা হত্যা মামলার এজাহারে সামিরা হকসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:
প্রয়াত নায়কের স্ত্রী সামিরা হক
ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই
লতিফা হক লুসি
চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডন
অন্যান্য অভিযুক্ত ব্যক্তি।
মামলা প্রসঙ্গে আলমগীর কুমকুম বলেন, “সালমান শাহের বাবা (কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী) দীর্ঘদিন চেষ্টা করেছেন অপমৃত্যুকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করতে। ইনশাআল্লাহ, এবার প্রমাণ হবে এটি হত্যা ছিল, আত্মহত্যা নয়।”
দীর্ঘ ২৯ বছরের আইনি পথচলা:
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মাত্র ২৫ বছর বয়সে সালমান শাহের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রথমে তাঁর বাবা অপমৃত্যুর মামলা করেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে এটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়।
সিআইডি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত, র্যাব এবং সর্বশেষ পিবিআই—বিভিন্ন সংস্থা মামলাটি তদন্ত করলেও প্রতিবারই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ‘আত্মহত্যা’র কথাই বলা হয়।
তবে সালমান শাহের পরিবার বরাবরই এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ দীর্ঘ ২৯ বছর পর মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে নতুন করে দায়ের হলো।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এখন রমনা মডেল থানা পুলিশ এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করবে। কোটি ভক্তের প্রিয় নায়কের মৃত্যুর রহস্য এবার উদ্ঘাটিত হবে কিনা, সেদিকেই দৃষ্টি রাখছে পুরো দেশ।



