ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে শুধুমাত্র ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ (I Love Muhammad) লেখাকে কেন্দ্র করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২,৫০০ জন মুসলমানের নামে মামলা হয়েছে এবং অন্তত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (APCR)।
ঘটনার সূত্রপাত উত্তর প্রদেশের কানপুর শহরে, যেখানে গত ৪ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মুসলমানরা একটি আলোকিত বোর্ডে “I
Muhammad” লিখে সাজসজ্জা করেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু হিন্দু সংগঠন অভিযোগ তোলে যে এটি নতুন ‘ধর্মীয় প্রচলন’, যা নাকি তাদের উৎসবের স্থানের কাছাকাছি স্থাপন করা হয়েছে। এরপর পুলিশ ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে মামলার নির্দেশ দেয়।
পরবর্তীতে এই ঘটনা বেরেলি, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, এবং জম্মু-কাশ্মীরসহ বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বেরেলিতে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর মাওলানা তৌকির রাজা খানসহ ৭৫ জনকে আটক করা হয়। তাদের কয়েকজনের ঘরবাড়ি স্থানীয় প্রশাসন ‘অবৈধ নির্মাণ’ দেখিয়ে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলে—যা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে “বিচারবহির্ভূত শাস্তি”।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার সংরক্ষিত। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র “আই লাভ মুহাম্মদ” বলাই কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু প্রশাসন অভিযোগ করছে যে এই স্লোগান ‘ধর্মীয় উত্তেজনা’ সৃষ্টি করছে।
এপিসিআর-এর সমন্বয়ক নাদিম খান বলেন, “সরকার জানে এই বাক্যটি বেআইনি নয়। তাই তারা অভিযোগ করছে অন্য খাতে—যেমন ভাঙচুর, অবৈধ সমাবেশ ইত্যাদি।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আকর প্যাটেল বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও ধর্মীয় ভালোবাসা প্রকাশের জন্য মানুষকে গ্রেপ্তার করা ভারতের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চেতনাকে ক্ষুণ্ন করছে এবং মুসলিম তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বঞ্চনা ও হতাশা সৃষ্টি করছে।
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘটনাটিকে ‘সমাজিক সম্প্রীতি নষ্টের প্রচেষ্টা’ বলে আখ্যা দিলেও সমালোচকরা বলছেন, এটি সরকারের পক্ষ থেকে মুসলিমদের ভয় দেখানোর কৌশল মাত্র।



