গাজা সংঘাত নিয়ে পশ্চিমা নেতাদের দ্বিচারিতা অব্যাহত আছে । বিশ্লেষকরা বলছেন, মানবিক সংকট ও ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের দুর্ভোগের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলো জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
ব্যতিক্রম হল আইরল্যান্ড, দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে। দেশটি গাজায় চলমান হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে এবং শান্তি ও মানবাধিকারের আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা সাম্প্রতিক বিবৃতিতে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের তাৎক্ষণিক মুক্তি দাবি করলেও, গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় ও হাজারো বেসামরিক প্রাণহানির বিষয়ে তুলনামূলকভাবে নীরব থাকছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মনোভাব পশ্চিমা দেশগুলোর “দ্বিচারিতা ও পক্ষপাতদুষ্ট নীতি”কে আরও স্পষ্ট করে তুলছে। তারা বলছেন, সত্যিকারের স্থায়ী শান্তির জন্য শুধু জিম্মি মুক্তিই নয়, গাজায় সহিংসতা ও দখলদারিত্বের অবসানও জরুরি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে যুক্তরাজ্য “সমস্ত আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না সব জিম্মি মুক্তি পায় এবং অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।”
আইরিশ উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেছেন, “এখন এমন একটি সুযোগ এসেছে যা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অকল্পনীয় কষ্টের অবসান ঘটাতে পারে।” তিনি আরও যোগ করেন, “সহিংসতা থামাতে হবে, জিম্মিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং দ্রুত গাজায় ব্যাপক মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে হবে।”
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ দৃঢ়ভাবে বলেন, “সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।”
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা কখনো ভুলে যেতে পারি না হামাসের দ্বারা সংঘটিত নৃশংস ঘটনাগুলো।” তিনি একইসঙ্গে ট্রাম্পের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং সংঘাতের অবসানের আহ্বান জানান।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুনর্ব্যক্ত করেন, “ফ্রান্সের আহ্বান স্পষ্ট—সব জিম্মির মুক্তি ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “এমন নৃশংসতা আর কখনো ঘটতে দেওয়া যাবে না।”
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরকে “ইতিহাসের অন্যতম অন্ধকার দিন” হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব “একটি সুযোগ এনে দিয়েছে, যা নষ্ট করা যাবে না। এর মাধ্যমে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন বলেন, “সব জিম্মির অবিলম্বে মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি এখন হাতের নাগালে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে যাতে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে অঞ্চলে স্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত হয়।”