সিরিয়ায় রবিবার অনুষ্ঠিত হলো জনপ্রতিনিধি পরিষদের (People’s Assembly) নির্বাচন—যা দেশটির জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি হচ্ছে ডিসেম্বর মাসে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর প্রথম নির্বাচন। প্রায় পাঁচ দশকের একনায়কতান্ত্রিক আল-আসাদ শাসনের অবসান ঘটার পর এই ভোটকে নতুন সরকারের জন্য বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমদ আল-শারাআ-এর নেতৃত্বে এই নির্বাচন হলেও, ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সরাসরি ভোট নয়
সিরিয়ার নাগরিকরা এবার সরাসরি ভোট দিতে পারেন নাই। নতুন সংসদে মোট ২১০টি আসন থাকছে, যা আগের চেয়ে ৪০টি কম। এর মধ্যে ৭০ জন সদস্য প্রেসিডেন্ট আল-শারাআ নিজেই নিয়োগ করবেন, আর বাকি ১৪০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন আঞ্চলিক সাবকমিটির ভোটে।
এই সাবকমিটিগুলো তদারকি করছে ১১ সদস্যের সুপ্রিম কমিটি, যেটিও আল-শারাআ দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত। প্রায় ৬,০০০ নির্বাচক (electors) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভোটকলেজে ভোট দিচ্ছেন।
সরকারের দাবি, দীর্ঘ ১৪ বছরের যুদ্ধের পর নির্ভরযোগ্য জনগণনা না থাকায় সাধারণ ভোট গ্রহণ সম্ভব নয়।
প্রার্থী ও কাঠামো
সুপ্রিম কমিটি মোট ১,৫৭০ জন প্রার্থীকে অনুমোদন দিয়েছে ১৪০টি নির্বাচিত আসনের জন্য। খসড়া আইনে নারী, প্রতিবন্ধী ও পেশাজীবীদের প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব থাকলেও কোনও আনুষ্ঠানিক কোটা নেই।
নির্বাচনের আগমুহূর্তে তারতুস প্রদেশে প্রার্থী হায়দার শাহিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সরকার বলছে, “পূর্বতন শাসনব্যবস্থার অবশিষ্ট সদস্যরাই” এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ভোট স্থগিত কিছু এলাকায়
দেশের সব অঞ্চলে ভোট হচ্ছে না। উত্তর-পূর্বের কুর্দি নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং দক্ষিণের সুয়াইদা অঞ্চলে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। সেখানে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কারণে নির্বাচন আয়োজন নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ৩২টি আসন আপাতত শূন্য থাকবে।
জনগণের মনোভাব
সিরিয়ানদের মধ্যে একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে সন্দেহ। অনেকে আল-আসাদ পরিবারের পতনকে স্বাধীনতার সূচনা হিসেবে দেখছেন। তবে নিরাপত্তা সংকট ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে শঙ্কাও কম নয়।
একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৬১ শতাংশ সিরিয়ান গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার পক্ষে, যেখানে একাধিক রাজনৈতিক দল অংশ নেবে।
একনায়কতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নাকি নতুন সূচনা?
বিশ্লেষকদের মতে, আল-শারাআ এখনো সিরিয়ার রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে এই নির্বাচন আল-আসাদ আমলের ভুয়া ভোটের পুনরাবৃত্তি নয়, বরং এক ধরনের প্রাথমিক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেকে।
সামনে কী?
ফলাফল প্রকাশ হবে মঙ্গলবারের মধ্যে। এরপর দেখা যাবে—এই নতুন সংসদ প্রকৃত অর্থে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা নিতে পারে কি না, নাকি কেবল সরকারের সিদ্ধান্তে সীলমোহর দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
অনেকে বলছেন, এটি হয়তো পূর্ণ গণতন্ত্রের দিকে প্রথম পদক্ষেপ, আবার কেউ কেউ দেখছেন নতুন ধরনের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার সূচনা হিসেবে।
সূত্র: আল জাজিরা, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আল-ওয়াতান।