তুরস্কে শান্তি আলোচনার মধ্যেই আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষে নিহত ৪ আফগান বেসামরিক।
তুরস্কের ইস্তানবুলে শান্তি আলোচনা চলাকালীন আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত চারজন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে শুক্রবার আফগান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক সীমান্তে, পাকিস্তানের চামান এলাকার বিপরীতে। উভয় দেশ একে অপরকে সংঘর্ষ শুরুর জন্য দায়ী করেছে, যদিও কাতার-মধ্যস্থ একটি যুদ্ধবিরতি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বহাল রয়েছে বলে দাবি করেছে দুপক্ষই।
আফগানিস্তানের স্পিন বোলদাকের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান আলি মোহাম্মদ হাকমাল বলেন, “গোলাগুলি পাকিস্তানের দিক থেকেই শুরু হয়েছিল। তবে ইস্তানবুলে চলমান শান্তি আলোচনার কারণে আফগান বাহিনী পাল্টা জবাব দেয়নি।”
অন্যদিকে ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তাহির আন্দরাবি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গোলাগুলি শুরু করেছিল আফগান বাহিনী, তবে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।”
পাকিস্তান সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, কাতারের মধ্যস্থতায় গত ১৯ অক্টোবর যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, তা এখনও কার্যকর আছে।
ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত শান্তি বৈঠকে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মালিক, আর আফগান পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আব্দুল হক ওয়াসিক। আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে কাতার ও তুরস্ক।
পাকিস্তান জানিয়েছে, তাদের মূল দাবি হলো সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে আশ্রয় দিচ্ছে। কাবুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত মাসে দুই দেশের সীমান্তে ভয়াবহ সংঘর্ষে সৈন্য, বেসামরিক ও জঙ্গিসহ ডজনখানেক মানুষ নিহত হয় এবং শতাধিক আহত হয়। ওই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় ৯ অক্টোবর কাবুলে একাধিক বিস্ফোরণের পর, যার জন্য আফগান তালেবান পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল।
তুরস্ক জানায়, গত সপ্তাহের আলোচনায় উভয় পক্ষ একটি পর্যবেক্ষণ ও যাচাইকরণ ব্যবস্থা গঠনে সম্মত হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনকারীদের শনাক্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, অক্টোবরের সংঘর্ষে আফগানিস্তানের পক্ষে অন্তত ৫০ বেসামরিক নিহত এবং ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তান জানিয়েছে, তাদের ২৩ সেনা নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছে।
উভয় দেশ এখনো যুদ্ধবিরতি রক্ষা ও সীমান্তে স্থিতিশীলতা ফেরানোর উপায় খুঁজছে, যদিও ইস্তানবুল আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে পাকিস্তান স্বীকার করেছে।



