রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থিত ২৮ দফার শান্তি প্রস্তাব আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। পরিকল্পনাটি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না হলেও ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে পুরো খসড়াটি সরবরাহ করেছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, পরিকল্পনাটি রাশিয়াকে “উল্লেখযোগ্য সুবিধা” দিচ্ছে, বিপরীতে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে ভূখণ্ড ছাড় এবং ন্যাটো পরিত্যাগের মতো কঠিন শর্ত।
খসড়া অনুযায়ী ভূখণ্ডগত ছাড়ের দাবিগুলো হলো—
ক্রিমিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চলকে ডি-ফ্যাক্টো রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন “লাইন অফ কন্ট্যাক্ট” বরাবর স্থির হবে।
রাশিয়া দখলে থাকা অন্যান্য সমঝোতাকৃত এলাকা ছাড়তে পারে।
ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্কের অংশকে নিরস্ত্রীকৃত বাফার জোন ঘোষণা করা হবে।
প্রস্তাবে নিরাপত্তা ও ন্যাটো বিষয়ক শর্তগুলো হলো-
ইউক্রেন তার সংবিধানে ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার অঙ্গীকার যুক্ত করবে।
ন্যাটোও ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে সদস্য না করার সিদ্ধান্ত নথিভুক্ত করবে।
ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনী ৬ লাখে সীমিত রাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে, তবে রাশিয়া বা ইউক্রেন কেউই তা ভঙ্গ করতে পারবে না।
পরিকল্পনা অনুযায়ী রাশিয়ার জন্য কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো হলো—
রাশিয়া ইউরোপ ও ইউক্রেনে ভবিষ্যতে আর আক্রমণ না করার অঙ্গীকার করবে।
নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের পথ তৈরি করা হবে।
রাশিয়াকে পুনরায় জি-৮–এ যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া যৌথভাবে জ্বালানি, অবকাঠামো ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করবে।
প্রস্তাবে ইউক্রেনে পুনর্গঠন তহবিল ২০০ বিলিয়ন ডলারের পুনর্গঠন প্যাকেজ রাখা হয়েছে, যার মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার আসবে রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ থেকে, বাকি অংশ ইউরোপ যোগ করবে। অবকাঠামো, জ্বালানি, প্রযুক্তি ও খনিজ খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ লক্ষ্য করা হয়েছে।
পরিকল্পনায় মানবিক ও রাজনৈতিক ধারাগুলো হলো-
বন্দী ও নিখোঁজদের “অল ফর অল” ভিত্তিতে বিনিময়, জোরপূর্বক নেওয়া শিশুদের ফেরত পাঠানো, যুদ্ধের সকল পক্ষকে সম্পূর্ণ ক্ষমা, ইউক্রেনে ১০০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন।
সমগ্র প্রক্রিয়া তদারকিতে থাকবে “পিস কাউন্সিল” যার নেতৃত্ব দেবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুই পক্ষ শর্তে সম্মত হলে তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে।
বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক ও ইউক্রেনের কিছু কর্মকর্তা মনে করছেন ইউক্রেনের ব্যাপক ভূখণ্ড ছাড় রাজনৈতিকভাবে “অগ্রহণযোগ্য”, ন্যাটো থেকে সরে আসা পশ্চিমাদের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, রাশিয়াকে দ্রুত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়া “ঝুঁকিপূর্ণ” হতে পারে।
তবে সমর্থকদের মতে, চলমান যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদে অচলাবস্থায় পড়েছে, এবং যেকোনো বাস্তবসম্মত সমাধানেই উভয় পক্ষকে ছাড় দিতে হবে।



